শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন
পরকালে মুক্তির জন্য ঈমান আনা অপরিহার্য। তাই কাফিররা চিরকাল জা’হান্নামে থাকবে। কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো করলে মু’সলমান হয়েও প্রথমবারে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।
তারা ওই গুনাহর কারণে প্রথমে জাহান্নামে শা’স্তি ভোগ করবে। এরপর আল্লাহ চাইলে তারা জান্নাতে যাবে। ওই ধরনের কিছু গুনাহ নিম্নরূপ—
হা’রাম খাদ্য ভ’ক্ষণকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত
পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে বায়হাকি : ৫৫২০)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছি’ন্নকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছি’ন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি : ৫৫২৫)
প্রতিবেশীকে ক’ষ্ট দানকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার অ’ত্যাচার থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মু’সলিম : ৬৬)
মাতা-পিতার অবা’ধ্য স’ন্তান ও দাইয়ুস না’রী জান্নাতে যাবে না : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন শ্রেনির লোক জান্নাতে যাবে না—মাতা-পিতার অবা’ধ্য, দাইয়ুস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীনস্থ না’রীকে বেপর্দা চলাফেরায় বা’ধা দেয় না) এবং পু’রুষের বেশ ধারণকারী ম’হিলা।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ২২৬)
অ’শ্লীলভাষী ও উ’গ্র মেজাজি জান্নাতে যাবে না : হারেছা বিন ওহাব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অ’শ্লীলভাষী ও উ’গ্র মেজাজি ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।’ (আবু দাউদ : ৪১৬৮)
প্র’তারণাকারী শাসক জান্নাতে যাবে না : হজরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মু’সলমানদের ও’পর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ অবস্থায় মা’রা যায় যে সে তার অধীনস্থদের ধোঁ’কা দিয়েছে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি : ৬৬১৮)
অন্যের সম্পদ আ’ত্মসাৎকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কসম করে কোনো মু’সলমানের সম্পদ আ’ত্মসাৎ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জা’হান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করেন। এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদিও সামান্য কোনো জিনিস হয়? তিনি বললেন, যদিও পিপুলগাছের একটি ছোট ডাল হোক না কেন।’ (সহিহ মু’সলিম : ১৯৬)
খোঁটাদানকারী, অবা’ধ্য স’ন্তান ও ম’দ্যপ জান্নাতে যাবে না : হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মাতা-পিতার অবা’ধ্য স’ন্তান, সর্বদা মদপানকারী—এই তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে নাসায়ি : ৫৫৭৭)
চোগলখোর জান্নাতে যাবে না : হজরত হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মু’সলিম : ১৫১)
অন্য পিতার সঙ্গে স’ম্বন্ধকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত সাদ ও আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে অন্য পিতার সঙ্গে স’ম্পর্কিত করে—অর্থাৎ নিজেকে অন্য পিতার স’ন্তান বলে পরিচয় দেয়, তার জন্য জান্নাত হা’রাম।’ (সহিহ বুখারি : ৬২৬৯)
গর্ব-অহংকারকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মু’সলিম : ১৩১)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাফরমান জান্নাতে যাবে না : হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবে, কিন্তু সে ব্যক্তি নয়, যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে। সাহাবীরা আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানি করে, সে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে।’ (সহিহ বুখারি : ৬৭৩৭)
দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অ’ন্বেষণ করা হয় সেই ইলম যে ব্যক্তি দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (আবু দাউদ : ৩১৭৯)
অকারণে তালাক কামনাকারী না’রী জান্নাতে যাবে না : হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে না’রী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (তিরমিজি : ১১০৮)
কালো কলপ ব্যবহারকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শেষ যুগে কিছু লোক কবুতরের সিনার ন্যায় কালো কলপ ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (সুনানে নাসায়ি : ৪৯৮৮)
লৌকিকতা প্রদর্শনকারী জান্নাতে যাবে না : হজরত আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। অতঃপর একজন কারিকে। তারপর একজন দানশীল ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
অতঃপর শহীদকে বীর-বাহাদুর উপাধি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করার অ’পরাধে, কারি সাহেবকে বড় কারির উপাধি ও সুখ্যাতি লাভের জন্য কিরাত শেখার অ’পরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের নিয়তে দান-সদকা করার অ’পরাধে উপুড় করে জা’হান্নামে নি’ক্ষেপ করা হবে।’ (সহিহ মু’সলিম : ৩৫২৭)
ওয়ারিসকে ব’ঞ্চিতকারী জান্নাতে যাবে না : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিসকে তার অংশ থেকে ব’ঞ্চিত করল, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৬৯৪)
Leave a Reply